x 
Empty Product

 

 
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পিঠালীতলা গ্রামের মনিরুল ইসলাম। কয়েকদিন ধরে অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় তিনি। গাছে আম হবে কি না, সব পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে নাকি, কি হবে এসব প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিভাবে ভাল পরিচর্যা নেয়া যায় তাতে আরও টাকা খরচ হলে হোক। আমের মুকুল রক্ষা করতেই হবে। তবে শেষ পর্যন্ত কি শেষ রক্ষা হবে তার। এরকম প্রশ্ন শুধু মনিরুলের একার নয়, টানা কয়েকদিনের মুষলধারে বৃষ্টির কারণে উপজেলার সব আম ব্যবসায়ী ও চাষীদের একই রকম দুশ্চিন্তা। দেশের সুমিষ্ট আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫০ ভাগ আম বাগানই শিবগঞ্জ উপজেলায়। তাই সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন এ উপজেলার আম ব্যবসায়ীরা।
সাধারণত মাঘ মাসের শেষার্ধ থেকে ফাল্গুন মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত আম গাছে মুকুল আসে। চলতি বছর আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে মুকুল আসতে আরম্ভ করার পর থেকে আবহাওয়া বিরুপ হওয়ায় এখন পর্যন্ত শতকরা ৭০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। কিন্তু অসময়ে কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ মুকুলই নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। আর এর জন্য আমচাষিদের প্রতিবার বৃষ্টির পর আমের মুকুল রক্ষার জন্য ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হচ্ছে। এর জন্য আমচাষিদের খরচের হিসেব দীর্ঘ হচ্ছে। বাড়ছে উৎপাদন খরচও।
স্থানীয় কৃষি দফতর সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জের পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়ে থাকে। আমগাছের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ লাখ। এ ছাড়াও আগাম জাতের গুটি আমগাছগুলোতে মুকুল বেশি বের হয়েছে। শিবগঞ্জের উত্তরাঞ্চলীয় ইউনিয়ন কানসাট, শাহাবাজপুর, দাইপুকুরিয়া, চককীর্তি ও মোবারকপুরে আরও বেশি মুকুল এসেছে। আগামীতে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে যে পরিমাণ মুকুল এসেছে সে মোতাবেক আম উৎপাদনে কোন ঘাটতি হবে না বলে স্থানীয় কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়। এ বছর আমের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার মেঃ টন।
আম শিবগঞ্জের একটি অর্থকরী সম্পদ। এ এলাকায় বছরে প্রায় ৬ মাস আম ব্যবসার সাথে হাজার হাজার লোক জড়িত থাকে। বৈশাখ মাসে আম পাকা শুরু হয় এবং আশ্বিন ও কার্তিক মাসের শেষ পর্যন্ত বাজারে সর্বশেষ আম পাওয়া যায়। স্বাভাবিক ভাবে বৈশাখী আমকে দিয়েই সূচনা হয় মধু মাসের। টক মিষ্টি সুস্বাদু আশ্বিনা আম দিয়েই মধু মাসের শেষ হয় আশ্বিন-কার্তিক মাসে। এবার শিবগঞ্জে উন্নতজাতের গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, বোম্বাই, লক্ষণ ভোগ, ফজলি, আশ্বিনা এবং বিভিন্ন উন্নতজাতের গুটি আমগাছে অতীতের চেয়ে মুকুল এসেছে বেশি। শিবগঞ্জে ৩টি জাতের আম পাওয়া যায় আগাম, মধ্যম ও নাবীজাত। ফজলি, ল্যাংড়া, গোপাল ভোগ, খিরসাপাত, আশ্বিনা, সূর্যপুরী, কুয়াপাহাড়ী, হিমসাগর, বোম্বাই, মোহনভোগ, রাজভোগ, কিষাণভোগ, লতাবোম্বাই, ফুনিয়া, গোরজিৎ, সামারবেহেস্তচৌষা এ আমগুলি উন্নত জাতের এবং দামও বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও ভারতের আম্রপালি, মলিকা, সুবর্ণরেখা প্রভৃতি জাতের আমের বাগান শিবগঞ্জ উপজেলাতেও সমপ্রসারিত হয়েছে।
আদিকাল থেকে প্রচলিত আমগুলি চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎকৃষ্ট আম বলে আজও কদর কমেনি। এগুলির মধ্যে রয়েছে গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, বোম্বাই, লক্ষণভোগ, ফজলি, আশ্বিনা। আমের বিচিত্র নাম রয়েছে। এ আমগুলির মধ্যে গুটি আম সাধারণত বিভিন্ন স্বাদের। এসব আম সাধারণত গরিব, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি কিছুটা সস্তা দামে কিনে খায়। প্রতিবছর আম বাগান সমপ্রসারিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমবাগান বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল ফারুক জানান, অসময়ের এ বৃষ্টিতে মুকুলের শতকরা ১০-১৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ রকম আবহাওয়া বিরাজ করলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হবে। তবে আবহাওয়া ভাল হলে ও সূর্যের আলো বের হলে সে সাথে তাপমাত্রা বাড়লে আমের মুকুলের আর কোন ক্ষতি হবে না, বরং আমের সাইজ বড় হবে। তবে কৃষকদের প্রতিবার বৃষ্টির পর গাছে ছত্রাসনাশক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।